আশার আলো নিভে গেল

হাজি চান মিয়া

সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার হারিছ আলী ছিলেন এক ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। তাঁর মহাপ্রয়াণে আমাদের এলাকায় এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি ছিলেন এ বৃহত্তর সুনামগঞ্জের অভিভাবক, সকল দুর্যোগে দলমত-নির্বিশেষে এ অঞ্চলের মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হত। আর তিনি পরম মমতায় সকলের নানা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতেন।

আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি এ কারণে যে, শৈশব থেকেই আমি এ মহান ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছি। একেবারে কাছে থেকে তাঁর সকল কর্মকান্ড দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। আমি দেখেছি নিরহংকার এ মানুষটি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য তথা অর্থবিত্তের কথা ভুলেও ভাবতেন না। সর্বদা তিনি তাঁর এলাকাবাসীর মঙ্গল-চিন্তা করতেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতেন।

প্রয়াত হারিছ আলী তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ছিলেন এক দৃঢ় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি কখনও কোনও অন্যায়ের সঙ্গে আপোশ করেননি। তিনি এ এলাকার অসংখ্য গরিব ও অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন। একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি, যে-সেবাধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, জীবনব্যাপী তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। তিনি তাঁর এলাকার অগণিত গরিব ও অসহায় মানুষকে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এমনকী কখনও কখনও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ওষুধ পর্যন্ত কিনে দিয়েছেন।

প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক এ মানুষটি সারাটা জীবন তাঁর আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন। অর্থনৈতিক বিবেচনায় তিনি মোটেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলেন না। কিন্তু তবু কোনও প্রকার লোভলালসা তাঁকে আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি।

স্থানীয়ভাবে শিক্ষার প্রসারে এবং মেধা বিকাশে ছিল তাঁর অনন্য ভূমিকা। তাঁরই অনন্য প্রচেষ্টায় ছাতক উপজেলায় বর্তমানে সেরা কলেজ জাউয়াবাজার ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর এ ঋণ শোধ করার মতো নয়। তাঁর নিকট আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরও অনেক কিছু পাওয়ার। হয়ত তিনি বেঁচে থাকলে পেতামও অনেক কিছু। কিন্তু তাঁর মহাপ্রয়াণে আমাদের সে আশার আলো নিভে গেল।

লেখক : ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক