কবিতা এবং ছড়া

ডা. হারিছ আলীর লেখা কবিতা এবং ছড়া

সাপ্তাহিক ‘বাংলার ডাকে’ প্রকাশিত হয়েছিল১৯৭৬-১৯৮০ সালের মধ্যে  , 
বাংলার ডাকের সম্পাদক,  আবদুল গাফফার চৌধুরী,
সহকারী সম্পাদক : 
ডা. হারিছ আলী,
ডা. জায়েদুল হাসান। 

লন্ডন থেকে প্রকাশিত হতো (১৯৭৬-৮০)

(১) জীবন
(বিলেতের প্রবাস জীবন নিয়ে)
এখানে আকাশ যেন সীমাহীন বেদনায় ঢাকা
এখানে বাতাস যেন শ্বাসরূদ্ধ করিবার চায়;
প্রেমময় প্রাণ যেন প্রাণহীন নীলের ছোঁয়ায়,
অব্যক্ত ব্যথার ভারে স্বপ্নময় গান মোর  ঢাকা।

এখানে জীবনে নেই মনে হয় প্রাণের আশ্বাস,
নাগরিক যন্ত্রণার দাবানলে অস্থির জীবন।
যৌবনের আবেদনে ব্যর্থ যেন সবুজ শিফন,
দারুচিনি দ্বীপে আছে বাঁচিবার গানের আশ্বাস।

স্বপ্নের সোনালী  রোদ হাসে না তো প্রাণের আবেগে,
এখানে প্রেমিক মন মুর্চ্ছা যায় সভ্যতার চাপে।
বিধাতা বিরূপ যেন প্রকৃতির অশুভ বিলাপে,
শুকতারা বেদনায়  পরিশ্রান্ত তাই থেকে জাগে।
আবেশে বিভোর নহে প্রেমেভরা ভোরের কিরণ

নিয়নের বেড়াজালে বাধা যেন প্রবাস জীবন,
আবেশে বিভোর নহে প্রেমেভরা ভোরের কিরণ।

(২)বুঝি না কিছুই

আকাশের কথা আমি বুঝি না কিছুই,
জানি না কোথায় এই নীলিমার শেষ;
বুঝি না কিছুই আমি পাখিদের গান,
কোথায় জানি না এই আবেগের রেশ।

বুঝি না কিছুই আমি হৃদয়ের কথা,
কি যে বলে বুঝি না তো  সাগরের ঢেউ;
বুঝি না তো কি যে চায় সাগরের গান,
বেদনায় পরিশ্রান্ত বুঝলে না কেউ।

বুঝিতে চাই না আমি ও চোখের  ভাষা,
অব্যক্ত বেদনার অবিশ্রান্ত জ্বালা,
শুনিতে চাই না আমি করুণ সংগীত
আমি চাই নীলকণ্ঠে হীরকের মালা।

বারবার মনে হয় বুঝি না তো  কিছু,
জীবন মৃত্যুকে খুঁজে আলেয়ার পিছু। 

(৩) নজরুল স্মরণে
(নজরুলের জন্মদিন উপলক্ষে রচিত সম্ভবত ১৯৭৭/৭৮ সালের কোন সংখ্যায়। তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল আট কোটি )

আট কোটি সন্তানেরে মানুষ করেছো তুমি কবি
মুখরিত বাংলায় আজো  তব কালজয়ী গান; 
চোখে  ভাসে ত্রিশ লাখ মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষের ছবি
‘ধুমকেতু’ এনেছিল মৃতদেহে জীবনের প্রাণ।

ধন্য মোর মাতৃভূমি পেয়েছিল তোমার  পরশ
যুগান্তের অন্ধকার মুছে দিলে গানের ছোঁয়ায়;
এনে দিলে ধানে গানে দুর্নিবার প্রাণের সাহস
প্রবাসে বিভোর মন অনাবিল নীলের সীমায়।

তোমার বিদ্রোহী তাই রূপ নিলো মুজিবের কাছে
পলাশী প্রান্তরে ফের অস্তমিত বাংলার রবি;
ময়ূরের পুচ্ছ  গুজে দাঁড়কাক কেন বল নাচে
বাংলায় ফিরে এসো  স্বর্গ হতে হে যুগের কবি।

তোমার  জনম দিনে আমি গাই মানুষের গান,
মায়ের মলিন  দেহে বিধাতার বিপ্লবী প্রাণ। 

(৪) নববর্ষের গান

আয় রে আমার ভাই,
আয় রে আমার বোন, 
নববর্ষে প্রীতি দিয়ে করি সম্ভাষণ।

আয় রে কৃষক আয় রে মেথর কুলি,
সব ভেদাভেদ যাই রে ভুলি    
সবাই মিলে স্বদেশ গড়ি, হোক  আমাদের পণ।।
আমরা সবাই একই মানুষ,
ভুলে যারে হিংসা নিন্দা দোষ,
সোনার বাংলা গড়তে হবে  করতে হবে রণ।।

নববর্ষে জানাই আমার প্রীতি,
মানবতা হোক আমাদের নীতি,
বিশ্বমাঝে উঁচু করি  শির, 
সকল ব্যথা মুছবো ধরণীর।
মোদের দানে ধন্য হবে বন উপবন।

(৫) আমাদের জন্মভূমি

নববর্ষে জানাই আমি সবারে প্রণাম
ধন্য আমার জন্মভূমি,
নতশিরে তোমায় নমি।
আমার গানে তুমি দিলে তোমার মধু নাম।।

নতুন বছর এলো ঘুরে
মানব সেবার মোহিন সুরে,
প্রীতির পরশ হৃদয় জুড়ে- খুশীর ধুমধাম।।

এসো  সবাই কোলাকুলি  করি
নববর্ষে অর্পণ করে বরি।
সব মানুষেরে নিজের করে লই
আমরা যেন পর কাহারো নই,
নতুন করে নববর্ষে হোক আমাদের নাম।।

(৬) নার্গিস

কিউ গার্ডেনের সুবিশাল আঙিনায়
সেদিন হারিয়েছিলাম অজান্তে,
পৃথিবীর বহু শতাব্দীর নীরব সাক্ষী
অজস্র বৃক্ষরাজি আর কুল।
কত নীরব সংগীতে ওরা নিমগ্ন
কোন এক নির্বাক ঋষির মতো।
যুগযুগান্তের অকথিত প্রেমের সংলাপ
বুকে নিয়ে ওরা আকাশকে চুমু দেয়
অজস্র তারকা আর ধুমকেতু
যেন ওদের প্রাণের প্রেয়সী।
প্রাণ মাতানো  ফুলের সুন্দরের সমারোহ
যেন দেবতার অকৃপণ প্রেমের আবেগ।
কিন্ত্ত যে কি আমি পাইনি খুঁজে। 

(৭) মাধবীর জন্য গান

মাধবী মৃদু হেসে
বসল পাশে এসে
দু’বাহু জড়ায়ে বললো  একটি গান।।
ভালবাসি তোমায় কত
নীল আকাশের তারার মত-
অন্ধকারে ধরার মাঝে আমায় দিলে স্থান।।
মাধবী চোখের  জলে
কত কি আমায় বলে।
বুঝিনে তাহার কথা
দিলাম শুধু সে ব্যথা,
অজানিতে শুধু তারে করি অপমান।।
মাধবী হেসে হেসে
চলে গেল অবশেষে
কোন সুদূরে জানি না তো করে অভিমান।।