তাঁর কোনও অংহবোধ ছিল না

সৈয়দ জয়নুল শামস

ডা. হারিছ আলীর সঙ্গে আমার প্রায় বারো বছর ধরে পরিচয়-ঘনিষ্ঠতা। ২০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ রোগী দেখার জন্য তাঁকে একটা রুম বরাদ্ধ করা হয়। সেই সূত্রে আমি মাঝেমধ্যে খবর নিতাম। কুশল বিনিময়ের সময়ে রোগী চলে এলে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।

স্বনামধন্য ডাক্তার এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতা হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক টানাপড়নের মধ্যে ছিলেন। অর্থের অভাবে দেয়াল নির্মাণ শেষ করতে পারেননি, জানালেন। তাঁকে শিশুর মতো সরল মনে হয়েছে আমার, ডাক্তার হিসেবে কোনও গরিমা কিংবা অহংবোধ ছিল না। রাজনৈতিক নেতা হওয়া সসত্ত্বেও কথাবার্তায় বিনম্র স্বভাব সর্বদা পরিলক্ষিত হত। আসার সময় তিনি তাঁর গেইট পর্যন্ত এসে আমাদের বিদায় সম্ভাষণ জানান।

একদিন ২০১০ এর মাঝামাঝি আমি ও আমার বন্ধু জয়নাল আবেদীনকে তাঁর বাসায় নিমন্ত্রণ করেন। আমরা রাত ৯টার পর তাঁর গোপশহরের বাসায় উপস্থিত হই। তিনি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বসালেন, এরপর অনেক গল্প, রাজনৈতিক, পারিবারিক বিষয় আসয় নিয়ে। এক ফাঁকে জয়নাল আবেদীনকে ধন্যবাদ দিলেন তাঁকে স্টেডিয়াম মার্কেটে একটা রুম সরবরাহ করে প্রেকটিস করার সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং ঘুরে ঘুরে বাসার কাজ যতটুকু সম্পন্ন হয়েছে তা দেখালেন। স্বনামধন্য ডাক্তার এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতা হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক টানাপড়নের মধ্যে ছিলেন। অর্থের অভাবে দেয়াল নির্মাণ শেষ করতে পারেননি, জানালেন। তাঁকে শিশুর মতো সরল মনে হয়েছে আমার, ডাক্তার হিসেবে কোনও গরিমা কিংবা অহংবোধ ছিল না। রাজনৈতিক নেতা হওয়া সসত্ত্বেও কথাবার্তায় বিনম্র স্বভাব সর্বদা পরিলক্ষিত হত। আসার সময় তিনি তাঁর গেইট পর্যন্ত এসে আমাদের বিদায় সম্ভাষণ জানান। প্রায়ই গরিব অসহায় রোগীদের ফ্রি চিকিৎসাপত্র দিতেন। বিভিন্ন সময় দালালচক্রের কারণে ঝামেলা সৃষ্টি হলে তিনি নিজে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষায় তৎপর হয়েছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে বসে তিনি চিকিৎসা প্রদান করার সুবাদে অনেক বড়ো বড়ো নেতা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসতেন। তিনি সাধারণ একটা কাঠের চেয়ারে বসে রোগী দেখতেন। তাঁর লেখা বই ছন্দ সুরের বন্দনা (২০০৮) আমাকে উপহার দিয়েছিলেন, তাঁর গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন গণমানুষের কবি দিলওয়ার।

পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত হলে তাঁকে পড়তে দিতাম। আমার লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ দিতেন। তিনি ডাক্তারি পেশার ফাঁকে ফাঁকে লিখতেন। তিনি কবি মনের অধিকারী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে অন্তর্গত আলাপচারিতা দীর্ঘস্থায়ী হত। আমার সুহৃদ, হিতাকাক্সক্ষী ডা. হারিছ আলীকে মহান আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ